ছাদ বাগানে বারোমাস বেগুন চাষ

 

বেগুন বাঙালীদের খাবার তালিকায় একটি নিত্যদিনকার সবজি। বেগুনের ভর্তা বলুন অথবা বেগুন ভাজি,  ভাত অথবা খিচুড়ির সাথে এই বেগুন যেকোনো ভাবে বেশ ভালোই উপভোগ করা যায়। যারা খাদ্যরসিক তাদের কাছে তো বেগুনের আলাদাটাই একটি গ্রহণযোগ্য আছে।

এই বেগুন কিন্তু বারোমাসি একটি সবজি। বছরের যেকোনো সময়েই আপনি বেগুনের চাষ করতে পারেন। ঠিকঠাকমতো পরিচর্যা করতে পারলে এটি বছরের সবসময়ই ভালো ফলন দেয়। তবে শীতকালে অন্যান্য সবজির মতো বেগুন একটু বেশী ফলন দেয়, এটা সত্য।

 

বারোমাস বেগুন চাষ পদ্ধতি:

 

আপনারা যারা ছাদবাগানী  আছেন, তারা আসুন আমরা সারাবছর কিভাবে ছাদে বেগুন চাষ করতে পারি তা জেনে নিই। মোটামুটি ৩-৪ টি বেগুন গাছ ছাদে হলে একটি ছোটখাটো পরিবারের বেগুনের চাহিদা বেশ ভালোভাবেই পূরণ হয়ে যায়। বেগুনের অনেকগুলো জাত আছে।তবে আমরা সাধারণ মানুষ যারা আছি, তাদের কাছে বেগুন ধরুন দুই রকম। একটা চিকন (অনেকেই সিন্নাত বেগুন বলে), আরেকটা গোল/বড় (অনেকে তাল বেগুন বলে,এটা বেগুনী রঙেরও হয় আবার সাদা রঙেরও হয়)।

 

>>বেগুন আপনি চারাও লাগাতে পারেন আবার বীজও বপন করতে পারেন। আপনার যেভাবে সুবিধা হবে আপনি সেভাবে বেগুনের চাষ শুরু করবেন। (বীজ থেকে কিভাবে চারা তৈরী করবেন সে সম্পর্কে জানতে আমাদের অন্য একটি ব্লগ আছে সেটা গিয়ে পড়ে আসুন)।

 

>>বেগুন, ফলের ক্যারোটগুলোয়,  ১২ ইঞ্চির চওড়া মুখের টব / বর্তমানে ১৮ ইঞ্চির গ্রো ব্যাগ, পারমানেন্ট টব অথবা যেকোনো বড় টবে বেগুন গাছ লাগাতে পারেন। বেগুন গাছ যদি সঠিকভাবে রাখতে পারেন, তবে এটা সারাবছর এমনকি কয়েকবছর ধরেও ফলন নিতে পারবেন। শর্ত,  আপনাকে হতে হবে একজন দক্ষ বাগানী, এটা পুরাটাই একটা শিল্প। আচ্ছা সেই যাই হোক। শুরু করি মাটি প্রস্তুতি দিয়ে।

 

বেগুন চাষের মাটি তৈরী:

 

বেগুন গাছের জন্য সবচেয়ে ভালো হচ্ছে জৈব সার। আর মাটির ড্রেনেজ সিস্টেম একটু ভালো হতে হয়। আপনি যে টব ব্যবহার করবেন, সে অনুযায়ী সার+মাটি নিয়ে নিবেন। বেগুন চাষের মিডিয়ার জন্য একটা সাধারণ অনুপাত অনুসরণ করতে পারি।

 

মাটি:- ৩০% 

কম্পোস্ট:- ৩০%

কোকোডাস্ট:- ১০%

বালু :- ১০%

জিপসাম+ম্যাগসার+ কুইকপটাশ :- ১০%



>> চারা রোপনের ৪৫-৫০ দিনের মধ্যে ফুল চলে আসে। তবে বেগুন গাছে এই প্রথমদিকে ফুল না নিয়ে যদি 2G এবং 3G কাটিং পারফর্ম করা যায়, তবে গাছের গোড়াটাও একটু মোটা হয়,গাছ ঝোঁপালো হয়, আর বুঝতেই পারছেন, ফলনও বেশী আসবে।

 

বেগুন গাছে যখনই ফুল-ফল ধরবে, প্রতিবারই মাটিতে কিছু কম্পোস্ট, জিপসাম, ম্যাগসার আর হালকা কুইকপটাশ ব্যবহার করতে পারেন।

সেই সাথে প্রতি সপ্তাহে একবার করে নের খৈল ভেজানো পানি গাছের গোড়ায় ব্যবহার করবেন। এতে  মাটির নাইট্রোফিকেশন ভালো হবে, আর যেহেতু  গাছের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপাদান ই এখানে আছে, তাই গাছের সার্বিক গ্রোথও ভালো হবে।

 

বেগুন গাছের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা অন্য যেকোনো গাছ থেকে ভালো। এরা খুব সহজে মানিয়ে নিতেও পারে। বেগুন গাছে খুব একটা ফাঙ্গাস এ্যাটাক হয় না।

 

এরপরেও প্রতি ১০ দিন পর অক্সিকব+ ম্যানসার  গাছে স্প্রে করতে পারেন।এতে গাছ রোগমুক্ত থাকবে। বেগুন চাষে সবচেয়ে বেশী সমস্যা করে,  মিলিবাগ,জাবপোকা এবং মাছি পোকা।

 

( গাছে কোন পোকা কিংবা মাকড় আক্রমণ করলে কি কি কি ব্যবস্থা নিতে হবে,  সে নিয়ে আমাদের অনেকগুলো ব্লগ আছে।প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো দেখে আসতে পারেন।)

 

>>মিলিবাগ, জাবপোকা এর জন্য 'নাইট্রো/ পেগাসাস' বেশ ভালো কাজ করে। এর কীটনাশকের সাথে আপনারা 'প্রমোটার প্লাস' ব্যবহার করতে পারেন।এটা কীটনাশকের কার্যকারীতা কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়।প্রতি সপ্তাহে কিংবা দশদিন পরেও যদি হয়, তাও নিয়মিত কীটনাশক গুলো স্প্রে করা উচিত।এতে গাছ পোকামাকড় মুক্ত থাকবে।

 

>>আপনারা চাইলে 'নিমের তেল' জৈব কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

তাছাড়া, 'বায়ক্লিন' ব্যবহার করতে পারেন। এটা বেশ ভালো কাজ করে মিলিবাগ এবং জাবপোকার জন্য)

 

>>আর যদি পাতা কোঁকড়ানো টাইপের কোনো সমস্যা হয়, তবে 'ইমিটাফ+ ওবেরণ ' একসাথে ব্যবহার করতে পারেন।( বেগুনের অগ্রভাগ কুঁকড়ানোর জন্য মূলত 'থ্রিপস' এবং 'মাকড়' দায়ী,  সেক্ষেত্রে ইমিটাফ থ্রিপসের জন্য আর 'ওবেরণ' মাকড়ের জন্য ভালো কাজ করে।



>>আর বাকি আছে ' মাছি পোকা'।  বেগুনের মাছি পোকার জন্য 'ফেরোমন ট্র্যাপ' বসাতে হবে। এছাড়া 'yellow sticky trap ' গুলো আপনার ছাদবাগানে ব্যবহার করতে পারেন। এগুলা 'মাছি পোকা', জাব পোকাসহ বেশ কয়েক ধরণের পোকার বেশ ভালো প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে।

 

>>এই তো মাঝে মাঝে ফুল ঝরা কিংবা ফল ঝরার সমস্যা প্রতিরোধ করার জন্য 'ফ্লোরা', 'প্রটোজিম' ব্যবহার করতে পারেন। আর প্রয়োজন মনে হলে ভিটামিন 'নুট্রাফস N', 'নুট্রাফস ২৪' পিক(১০:১৪:১০) কিংবা NPK (19:19:19) ব্যবহার করতে পারেন।

Comments

Leave a Comment

products
Suggestions