শীতকালে অনেকের সবচেয়ে প্রিয় সবজির তালিকায় শীম অন্যতম থাকে। শীতকাল আসলেই রাস্তার পাশে, ধানের জমির পাশে কিংবা পুকুর পাড়ে শীম চাষ দেখা যায়। দেশীয় শীম চাষ করতে অনেক জায়গা লাগে। তাই ছাদে সেসব জাতগুলো চাষ করা বেশ কষ্টসাধ্য। আবার শীম গাছে প্রচুর পোকামাকড় বাসা বাঁধে। তাই শীম গাছ থেকে অন্যান্য গাছে পোকা ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেই ক্ষেত্রে ছাদে খাটো জাতের শীম চাষ করাই উত্তম। এ জাতের শীম চাষ করলে, ছাদে তেমন বড় ধরণের মাচা দিতে হবে না। মোটামুটি ছোট জায়গায় এই জাতের শীম চাষ করা যায়।
শীম মূলত শীতকালীন সবজি। আগাম ফলনের জন্য আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বীজ বপন করতে হবে। ছাদে শীম চাষ করার জন্য ফলের ক্যারোট খুবই উপযুক্ত। আর যাদের পারমানেন্ট টব বানানো আছে তারা সেখানে চাষ করতে পারেন।
মাটি প্রস্তুতি:-
মাটি :- ৩০ %
বালু :- ১০%
কোকোডাস্ট:- ১০%
কম্পোস্ট:- ৩০%
নিমের খৈল:-৫%
জিপসাম+ম্যাগসার+ কুইকপটাশ+বোরন+জিংক :-১৫%
মাটি তৈরীর পর ক্যারোট টি কে একটি জাল দিয়ে ভিতরের দিক টা ঢেকে দিবেন। এরপর নিচের অংশে ২ ইঞ্চি কোকোডাস্ট দিয়ে দিবেন। এর উপর কম্পোস্ট+ ম্যাগসার+জিপসাম মিশিয়ে তা কোকোডাস্টের উপর ছড়িয়ে দিবেন।
শীমের যখন ফুল আসা শুরু হয়, তখন এর সবুজ পাতা গুলোর মাঝে হলুদের ছোপ ছোপ ফোঁটা ফোঁটা দাগ পড়ে। এটি মূলত ম্যাগনেশিয়ামের অভাবে হয়, শীম গাছে ম্যাগসার এবং কুইকপটাশ এবং জিপসাম ফুল আসলে গাছের গোড়ায় ১৫ দিন পরপর প্রয়োজনমতো প্রয়োগ করতে হবে। এরপর তৈরীকৃত মাটি দিয়ে ক্যারোট টি ভর্তি করে নিবেন। তবে খেয়াল রাখবেন ক্যারোটের উপর থেকে ২ ইঞ্চি জায়গা যাতে খালি থাকে। এতে গাছের গোড়ায় পরিবর্তিতে সার এবং পানি দিতে সুবিধা হবে।
আচ্ছা ক্যারোটে তো মাটি ভর্তি হলো। এবার পানি দিয়ে মাটি টা ভিজিয়ে নিবেন। যাতে মাটিতে থাকা সার গুলো সহজে মিশতে পারে। এভাবে ৪-৫ দিন পর্যন্ত রেখে দিবেন।
এবার খাটো জাতের শীমের বীজ সংগ্রহ করে নিবেন। প্যাকেট থেকে বীজ বের করে নিবেন। এরপর বীজ গুলোকে দুই ঘন্টা রোদে রাখবেন, এরপর দুই ঘন্টা ছায়ায় রাখবেন। তারপর একটি পাত্রে পানি নিয়ে প্রায় ২৪ ঘন্টার জন্য ভিজিয়ে দিবেন। এরপর বীজ গুলো নিয়ে সরাসরি ক্যারোটে পুঁতে দিতে পারেন। আবার সীডট্রে থেকেও চারা তৈরী করে ক্যারোটে রোপণ করতে পারবেন। চারা থেকে শীম গাছে ফুল আসতে ৪৫-৬০ দিন সময় লাগে। আর ফুল থেকে পরিপক্ক শীম পেতে ৭-১২ দিন সময় লাগে।
রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ:-
>>শীম গাছে সবচেয়ে বেশী জাব পোকা, মিলিবাগ আক্রমণ করে। এসব পোকা দমনে পেগাসাস/ নাইট্রো:- ১মিলি/১ লি হারে স্প্রে করতে পারেন।
>>আর থ্রিপসের জন্য ইমিটাফ:- ১ মিলি/১ লি হারে স্প্রে করবেন। মাকড়ের জন্য ওবেরন:- ১ মিলি/১লি স্প্রে করবেন।
>> পাতা পঁচা,গোড়া পঁচা, শিকড় পঁচাসহ অন্যান্য ফাঙ্গাস জনিত সমস্যার জন্য মাঝে মাঝে দিতে পারেন ম্যানসার:- ২গ্রাম/১ লি।
>>অথবা রিডোমিল্ড গোল্ড:- ২ গ্রাম/১লি
অথবা এমিস্টার টপ :- ১ মিলি/১ লি হারে স্প্রে করে দিবেন।
>>তাছাড়া গাছে যখন ফুল আসবে তখন আলাদা করে -ফ্লোরা:- ১ মিলি/১ লি + প্রটোজিম:- ১ মিলি/১ লি হারে ১২ দিন পরপর স্প্রে করতে পারেন। এতে গাছের ফুল থেকে ফলের সেটিং ভালো হবে। এর সাথে গাছে ফুলের পরিমাণও বেড়ে যাবে।,
শীম যে ছাদে খুব সহজেই চাষ করা যায়।সেটা তো এতক্ষণে বুঝে গিয়েছেন। তা গাছ থেকে তরতাজা শীম পেড়ে, তা দিয়ে রান্না করলে কিন্তু আলাদা একধরণের তৃপ্তি পাওয়া যায়। ফ্রেশ জিনিসের অন্যরকম একটা ব্যপারই আছে। তাছাড়া শীমের পুষ্টি গুণাগুনও অনেক। এরমধ্যে প্রচুর প্রোটিন রয়েছে, সেইসাথে আছে পটাশিয়াম ম্যাগনেশিয়াম এবং ফসফরাস এবং রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার।
ছাদে বরবটি চাষ পদ্ধতি:
এখন ভাবছেন বরবটি চাষের পদ্ধতি কোথায়? শিরোনামেই ফাঁকি? না কোন ফাঁকি নেই। উপরিউক্ত একই পদ্ধতিতে আপনি চাইলে বরবটিও চাষ করতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে গাছে মাচা দিবেন নাকি নেট দিবেন সেটা আপনার উপর নির্ভর করবে।
আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। ধন্যবাদ সবাইকে।
Comments