শীতকলে ছাদবাগানের অন্যরকম আকর্ষণ হতে পারে ফুলকপি,ব্রকলি কিংবা বাঁধাকপি। সব্জিগুলো ছাদে দেখতে খুবই ভালো লাগে। ছোট টব, ফলের ক্যারোট অথবা পারমানেন্ট টবে খুব সহজেই বাঁধাকপি, ব্রকলি এবং ফুলকপি চাষ করা যায়। ফুলকপি,বঁধাকপি এবং ব্রকলি এই তিনটির চাষ পদ্ধতিই অনেকটা একই রকম। তাই আপনি এর মধ্যে যেকোনো একটি চাষ করতে পারলে বাকিগুলোও চাষ করতে পারবেন। আজকে আমরা ফুলকপির চাষ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো।
ফুলকপির আদিকথা
ফুলকপি একটি শীতকালীন সবজি। এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে ব্রাসিকা অলিরাসিয়া (Brassica oleracea)। ফুলকপির বীজ আগস্ট মাস থেকে রোপন করা যায়। মূলত শীতের আগাম ফলনের জন্য মধ্যে সেপ্টেম্বর মাস থেকে বীজ বপণ করা হয়। ফুলকপির চাষ করার জন্য প্রথমেই আলাদা জায়গায় এর বীজ থেকে চারা তৈরী করে নিতে হবে। এর চারা তৈরী হলে তা মূল জমিতে রোপণ করতে হবে।
চারা তৈরী:-
প্রথমেই ভালো কোম্পাণীর ফুলকপির বীজ সংগ্রহ করতে হবে। এরপর প্যাকেট থেকে বীজ বের করে ২ ঘন্টার জন্য রোদে গরম করে নিতে হবে। এরপর ২ ঘন্টার জন্য ছায়ায় রাখতে হবে। অতপর একটি পাত্রে পানি নিয়ে ১৫-১৬ ঘন্টার জন্য বীজগুলো ভিজিয়ে নিবেন। এরপর বীজগুলো সীডট্রে তে লাগিয়ে দিবেন। বীজ থেকে চারা বের হতে ৪-৫ দিন সময় লাগে, আর ১৫-২০ দিন বয়সের চারা মাটিতে লাগানোর উপযুক্ত হয়ে যায়। চারা লাগানোর ৩০ দিনের মধ্যে ফুলকপি/ব্রকলির ফুল দেখা যায়, আর বাঁধাকপির অগ্রপাতা বাঁধতে শুরু করে।মোটামুটি মাটিতে চারা লাগানোর ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে ফল খাওয়ার উপযোগী হয়ে যায়।
মাটি তৈরী:-
মাটি থেকে ভালাফলন পেতে হলে জমিতে পরিমাণ মতো সার প্রয়োগের বিকল্প নেই। জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুনাগুন যেমন বজায় থাকে তেমনি পরিবেশ ভালো থাকে।
কম্পোস্ট:- ৪০%
মাটি:- ৪০%
বালু:- ১০%
জিপসাম+ম্যাগসার+নিমের খৈল+কুইক পটাশ:-১০%
পরিচর্যা:-
মাটিতে চারা লাগানোর ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে যখনই ফুলকপির ফুল বের হতে দেখবেন, তখনই:
>>প্রটোজিম:- ১.৫ মিলি/১ লি
কম্প্লেসাল:- ১.৫ মিলি/১ লি
প্রমোটার প্লাস:- ৩ফোঁটা/১ লি হারে দিবেন।
এগুলো স্প্রে করলে ফুলকপির আকার সুন্দর হবে।পাশাপাশি এটি আকৃতিগত দিক দিয়ে বড়ও হবে।
আর এর সাথে
>>কুইকপটাশ :- ৫গ্রাম+ম্যাগসার:- ৩গ্রাম এক লিটার পানির সাথে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় সেচ দিয়ে দিবেন। এতে ফুলের গঠন ভালো হবে।
ফুলকপি, বাঁধাকপি এবং ব্রকলিতে লেদা পোকা বেশী আক্রমণ করে। এই পোকা গাছের কচি পাতা গুলো খেয়ে ফেলে। আর বড় পাতায় ছোট ছোট ছিদ্র করে ফেলে। ছাদবাগানে এছাড়া অন্য কোনো পোকার আক্রমণ খুব একটা দেখা যায় না। এটি দমনে:
>>নাইট্রো/পেগাসাস:- ১.৫ মিলি/১ লি
প্রমোটার প্লাস:- ৩ফোঁটা/ লি
আর ফাঙ্গাসের জন্য মাঝেমাঝে
ম্যানসার/রিডোমিল্ড গোল্ড:- ২ গ্রাম/১ লি হারে ৭-১০ দিন পর স্প্রে করবেন।
বি: দ্র:- ব্রকলি চাষের ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে, যখন ব্রকলির ফুলের অংশ সবুজ এবং শক্ত থাকতে থাকতে গাছ থেকে কেটে ফেলতে হবে। সবুজ ফুল ফুটে হলুদ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে যাবেন না।এতে ব্রকলি ভেঙে যায়, এবং রান্না করার পরও খুব একটা টেস্ট থাকে না। মোটামুটি ব্রকলি গাছ থেকে বের হওয়ার ২৫ দিনের মধ্যেই কেটে নিবেন। এতে গুণগত মানসম্মত ব্রকলি পাবেন।
আপনি ছাদে কেনো ফুলকপি, ব্রকলি 🥦কিংবা বাঁধাকপি চাষ করবেন?
শীতকালে ছাদে ফুলকপি,ব্রকলি কিংবা বাঁধাকপি চাষ করলে তা বাগানের সৌন্দর্যকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। চোখে দেখতেই ভালো লাগে। এক অন্যরকম অনুভূতি তৈরী করে। এছাড়ায় ছাদ থেকে নিরাপদ ফলন তো পাচ্ছেনই। আর এদের পুষ্টিগুণও অনেক।
ফুলকপির পুষ্টিগুণ:
ফুলকপিতে ভিটামিন বি,সি কে ক্যালসিয়াস, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক থাকে। এছাড়াও এতে প্রোট্রিন,ফ্যাট,ফাইবার ও ফোলেট রয়েছে। ফুলকপিতে আইসো থায়োসায়ানেট নামক রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ ভালোই ভূমিকা রাখে। আর ব্রকলিতে সালফোরেন নামক ফাইটোক্যামিকেল রয়েছে, যেটিও ক্যান্সার প্রতিরোধে চমৎকার কাজ করে।
বাঁধাকপির পুষ্টিগুণ:
আর বাঁধাকপি হচ্ছে ভিটামিন সি এর একটি চমৎকার উৎস। বাঁধাকপিতে গ্লুটামাইন এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে যার দহন নিবারক হিসেবে কাজ করে।
তাহলে কি বুঝলেন? এই শীতের সময়কে নিজের শরীরের জন্য একটি Reset সময় হিসেবে ব্যবহার চাইলে করতেই পারেন। বাহারী রকমের সবজি আলাদা আলাদা রকমের স্বাদ যেমন নিতে পারছেন পাশাপাশি নিজের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকেও নতুন করে ঝালিয়ে নিতে পারেন।
Comments