বর্তমানে ছাদবাগানে মাল্টা-কমলা গাছের বেশ ভালোই ধাপট চলছে। বেশীরভাগ ছাদবাগানেই মাল্টা কিংবা কমলার একটি করে হলেও চারা রয়েছে। তবে মাল্টা,কমলার এই ধাপটের ভিতরে বেশ কিছু অসাধু চারা ব্যবসায়ী সাধারণ ক্রেতাদের ধরিয়ে দিচ্ছেন, ভুল জাত। সেসব জাত আবার অনেকে চাষ করে হচ্ছেন প্রতারিত।তবে আজকে সেই সব আলোচনায় যাবো না। আজকে শুধু আলোচনা হবে ছাদবাগানে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে মাল্টা,কমলা গাছের পরিচর্যা নিয়ে।
মাল্টা গাছের ফল সাধারণ মধ্য অক্টোবর থেকে পাড়ার উপযুক্ত হয়। আর বর্তমানে যে বাউ ৩ মাল্টার গাছ পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো প্রায় মধ্য নভেম্বর মাসে পাড়লে বেশ ভালোই টেস্ট পাওয়া যায়।
কমলা গুলো গাছ থেকে ডিসেস্বর- জানুয়ারি মাসে পাড়তে হয়। আজকে আমরা বেশ কিছু সাধারণ নিয়ম/পরিচর্যার সাথে পরিচিত হবো।সে সব নিয়ম অনুসরণ করলে, আপনি মাল্টা /কমলা গাছ থেকে বেশ ভালোই ফল পাবেন।
প্রথম:-
আগেই বলেছি মাল্টা গাছের ফল মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর এর মধ্যে পাড়তে হয়।আর কমলা পাড়তে হয় মধ্য ডিসেম্বর থেকে জানুয়ােি মাসের মধ্যে। আপনার কাছে যে গাছই থাকুক না কেনো, আপনার গাছে ফল সংগ্রহ করার ঠিক ১৫ দিন পূর্বে গাছের গোড়ায় কম্পোস্ট+ হাড়ের গুড়া+শিংকুচি +নিমের খৈল+ জিপসাম+ কুইকপটাশ+ম্যাগসার একসাথে মিশিয়ে দিয়ে দিবেন। আর ফল সংগ্রহ করার ১.৫ মাস পূর্বেই যদি সম্ভব হয় তবে ফল গুলো ব্যাগিং করে দিবেন। এতে করে আপনি গাছে কোনো প্রকার রাসায়নিক স্প্রে করার প্রয়োজন হলেও তা ফলকে খুব একটা প্রভাবিত করবে না।
দ্বিতীয়ত:-
গাছে সার প্রয়োগের ১৫ -২০ দিন পর আস্তে আস্তে গাছ থেকে ফল গুলো সংগ্রহ করতে পারবেন। তো গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা সাথে প্রথম কাজই হচ্ছে, গাছের মরা ডাল, রোগাক্রান্ত ডাল ধারালো প্রুনার দিয়ে প্রুনিং করে দিতে হবে। সেই সাথে গাছে
অক্সিকব/ব্লিটক্স:- ২ গ্রাম/১ লি
নাইট্রো/পেগাসাস:- ১ মিলি/১ লি
ইমিটাফ:- ১ মিলি/১লি
প্রমোটার প্লাস:- ৩ ফোঁটা/১ লি হারে স্প্রে করে দিবেন।
প্রতি ৫ দিন পরপর এই স্প্রে টা ৩ বার দিবেন। এতে করে গাছে কোনো পোকামাকড় এবং ফাঙ্গাস থাকলে তা দূর হয়ে যাবে।
তৃতীয়ত:-
গাছের কান্ডে এই সময় 'গ্যামোসিস' নামক একধরণের রোগ হয়। যা কান্ড থেকে আঠালো এক ধরণে র রস বের হয়। এই রোগ দেখা মাত্রই যথাযত ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে কান্ড কালো হয়ে শুকিয়ে যায়। আর পুরো গাছই মারা যায়। তাই এই রোগ দেখার পূর্বেই অক্সিকব/ ব্লিটক্স এর পেস্ট বানিয়ে গাছের গোড়া থেকে উপরের দিকে ৬-৮ ইঞ্চি জায়গা/ গ্রাফটটিং এর অংশ পর্যন্ত পেইন্ট করে দিতে হবে। এতে করে এই রোগ হওয়ার সম্ভবনা কমে যাবে।
চতুর্থত:-
শীতকালে বেশীরভাগ গাছের বৃদ্ধিই কমে যায়। আর মাল্টা- কমলা গাছে ফুল আসার পূর্ব পর্যন্ত কোনো প্রকার পিজিআর স্প্রে করা যাবে না। এই সময়ে গাছ Dormancy এ থাকে। তাই গাছের বৃদ্ধিও খুব একটা হয় না।তাই এইসময়ে গাছে পিজিআর স্প্রে থেকে সম্পূর্ণ রঃপে বিরত থাকবেন।
আর হ্যাঁ! অনেকেই বলেন, গাছের ডাল ছাঁটাইয়ের পর গাছে সার প্রয়োগ করতে হয়। তবে সত্যি বলতে গাছের ডাল ছাটাইয়ের পূর্বেই যদি সার প্রয়োগ করা যায়, তবে পরবর্তীতে গাছে যে ডাল গুলো আসে সেগুলো অনেক মোটা এবং শক্তপক্ত হয়। (কারণ টা বুঝতেছেন ই গাছ যদি খাবার না পায়, তবে সে ডালপালা ভালোমত বাড়াবেই বা কি বলেন!) তাই গাছে খাবার দিয়ে এরপর ডাল ছাঁটাই/প্রুনিং করলে ভালো রেজাল্ট আসে।
পঞ্চমত:-
ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ থেকে মার্চ মাস- এপ্রিল মাসে মাল্টা-কমলা গাছে আবার নতুন ডালপালা আসলে শুরু করে। আর সেই নতুন ডাল থেকেই নতুন নতুন ফুল আসে। ( মাল্টা-কমলা গাছে ফুল আসার পূর্বে এবং পরে কি কি পরিচর্যা করতে হবে তা নিয়ে অন্য কোনো ব্লগে বিস্তারিত আলোচনা হবে।)
Anupam Bhattacharjee
অক্সিকব/ব্লিটক্স:- ২ গ্রাম/১ লি নাইট্রো/পেগাসাস:- ১ মিলি/১ লি ইমিটাফ:- ১ মিলি/১লি প্রমোটার প্লাস:- ৩ ফোঁটা/১ লি হারে স্প্রে করে দিবেন এখান থেকে যে কোন একটি ব্যবহার করলে হবে?
December 17, 2024 at 12:28 pm